20 May 2024, 11:02 am

সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরুন : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

অনলাইন সীমান্তবাণী ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সমাবেশের নামে ২৮ অক্টোবর বিএনপির সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে এগুলো আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে তুলে ধরে তাদের আসল চেহারা সামনে নিয়ে আসতে সাংবাদিক সমাজের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি সাংবাদিকদের বলবো, এসব সন্ত্রাসি কর্মকান্ড এবং দায়িত্ব পালনকালে আপনাদের ওপর যারা আক্রমণ করেছে তাদের আসল চরিত্র আন্তজাতিকভাবে আপনাদের তুলে ধরা উচিত।”
তিনি বলেন, “সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পিটানো আমার মনে হয় বাংলাদেশে এধরনের ন্যাক্কারজনক হামলার ঘটনা আর দেখা যায়নি। এর জবাব বিএনপিকে দিতে হবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে) আয়োজিত প্রতিনিধি সম্মেলনে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিক ও পুলিশের ওপর আক্রমনের তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেন, কোন কোন পত্রিকা এটাকে আবার কভার দেয়ারও চেষ্টা করেছে। তাদের ধিক্কার জানাই।
সেদিন গায়ের জ্যাকেটে ‘প্রেস’  স্টিকার লাগিয়ে যুবদল কর্মীর সন্ত্রাস ও অগ্নিসংযোগে অংশ নেয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রকাশ্যে যারা এ ধরনের অপকর্ম করেছে তারা ধরা পড়ে গেছে। সাংবাদিক নির্যাতন ও পুলিশ হত্যার শাস্তি এদেরকে পেতেই হবে।
প্রধানমন্ত্রী নির্যাতিত ও ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থ সাংবাদিকদের পাশে থাকার বিষয়ও সকলকে আশ্বস্ত করেন।
অনেক মিডিয়ায় নবম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন না হওয়াকে দু:খজনক আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী সাংবাদিকদের জন্য নতুন ১০ম ওয়েজ বোর্ড ঘোষণার প্রস্ততি চলছে বলেও জানান। আগামীতে জেলায় জেলায় সাংবাদিকদের আবাসনের জন্য প্লট বরাদ্দের পরিকল্পনাও সরকারের রয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তৃতা করেন।
বিএফইউজে সভাপতি ওমর ফারুক অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। সহসভাপতি মধুসুদন মন্ডল শোক প্রস্তাব পাঠ করেন। পরে সকলে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দীপ আজাদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
বিএফইউজে’র সাবেক সভাপতি ও মহাসচিবদের অনুষ্ঠানে সম্মাননা দেয়া হয়। প্রবীণ সাংবাদিক নেতা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, আব্দুল জলিল ভুঁইয়া, শাবান মাহমুদ এবং ওমর ফারুক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা গ্রহণ করেন।
১৩টি সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি এবং একটির সভাপতির অনুপস্থিতে সাধারণ সম্পাদক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। তারা হচ্ছেন- ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি সোহেল হায়দার চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আব্দুস সালাম খোকন, ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউল কবির খোকন, চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. শামসুল ইসলাম, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আবু তাহের, খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ফারুক আহমেদ, যশোর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনতোষ বসু, কুষ্টিয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রাশেদুল ইসলাম বিপ্লব,রাজশাহী সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. রফিকুল ইসলাম, বগুড়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. আমজাদ হোসেন শেখ মিন্টু, দিনাজপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ওয়াাহিদুল ইসলাম, বরিশাল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি স্বপন খন্দকার, গাজিপুর সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আতাউর রহমান এবং ব্রাক্ষনবাড়িয়া সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি দীপক চৌধুরী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্দোলন-সংগ্রাম আমরাও করেছি। আন্দোলনের নামে এধরনের সন্ত্রাসি কর্মকান্ড অত্যন্ত দু:খজনক। ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করতে চেয়েছিল বিএনপি ও আরো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দল, আমরা বাধা দেইনি। তারা কথা দিয়েছিল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করবে। দেখা গেল তারা সেখানে সন্ত্রাসি কর্মকান্ড শুরু করেছে। সাংবাদিকদের টার্গেট করে তাদের ওপর সবচেয়ে বেশি নির্যাতন চালানো হয়েছে, এটা অমানবিক। সাংবাদিকদের মাটিতে ফেলে পেটানো হয়। এটা কেন করা হলো-সে প্রশ্নের জাবাব বিএনপিকে দিতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুলিশের ওপর অত্যাচার হলো, যা এরআগেও আমরা দেখেছি। পুলিশকেও মাটিতে ফেলে পেটানো হয়, অচেতন হয়ে যাওয়ার পরও মারা হয়। তাদেরকে কোপানো হয় এবং ঢিল মারা হয়। প্রশ্ন হচ্ছে তারা শান্তি সমাবেশ করতে এসে এই ইট পাথর, অস্ত্র¿ কোথায় পেল? তারা যে কোপাল, সেটা (ধারাল অস্ত্র) কোথায় পেল? তারমানে তাদের উদ্দেশটাই আগাগোড়া খুব খারাপ ছিল। অগ্নিসন্ত্রাস এবং জ¦ালাও পোড়াও এটাই এদের চরিত্র। নির্বাচন ঠোকানোর নামে ২০১৩,১৪ ও ১৫ সালে এরকম সন্ত্রাসি কর্মকান্ড এবং অগ্নিসন্ত্রাস তারা করেছিল। সেখানে নির্বাচন তারা ঠেকাতে পারেনি নিজেরাও অংশগ্রহণ করেনি। হত্যা, খুন, গুম এগুলোই তারা খুব ভাল পারে।

সেদিনের নৈরাজ্যের বর্ননা দিতে গিয়ে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের আগ্রাসনের সঙ্গে এর তুলনা করে তিনি পুলিশ হাসপাতালে ঢুকে হামলা, অত্যাচার-নির্যাতন, অ্যাম্বুলেন্স পোড়ানো, রোগিবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে ধাওয়া করা ও হামলার কথা উল্লেখ করেন। এতটা অমানবিক আচরণ কোন রাজনৈতিক দল করতে পারে না। তিনি জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি আমলে পুলিশ দিয়ে সাংবাদিকর ওপর বর্বর নির্যাতনের কথাও এ সময় স্মরণ করিয়ে দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এদের কোন অধিকার নেই। যারা সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদে বিশ^াস করে তাদের কোন অধিকার নেই। তারা এদেশের মানুষের কল্যাণ চায়না। এদেশের মানুষের তারা শত্রু, এটাই আমি মনেকরি।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথাকথিত সুশীল সমাজ, সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের আন্তর্জাতিক সংগঠন এমনকি মানবাধিকার সংস্থাগুলো যারা সামান্য ঘটনা ঘটলেই প্রতিবাদে মুখর হয়ে ওঠে তাদের  বিষয়টি নিয়ে চুপ করে থাকার এবং কোন কথা না বলার কঠোর সমালোচনা করেন।
ওয়েজ বোর্ড গঠনে ঢাকার বাইরের সাংবাদিকদের অন্তর্ভ’ক্তির বিষয়টি লক্ষ্য রাখার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি  সাংবাদিকদের তাঁর সরকার ঘোষিত জাতয়ি পেনশন স্কীমের চারটি ধাপের যেকোনটি বেছে নেয়ার পরামর্শ দেন, যাতে চাকরীঅন্তে বা দুর্যোগ-দুর্বিপাকে নিজের ও পরিবারের কাজে লাগে। যারাই যে কাজ করেন না কেন তাদের একটি অবসরভাতার ব্যবস্থা সরকার এই পেনশন স্কীমে করে দিয়েছে।
সাংবাদিকদের জমি সংক্রান্ত তার নিকট আবেদন দেয়ার  বিষয়ে বলেন, একটা জমির আবেদন দিয়েছেন আমি দেখবো। জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরি করে দেবো। সেখান থেকে আপনারা আবাসন যাতে পান, সে ব্যবস্থা করবো।
তিনি বলেন, তাঁর সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে যেখানে আবাসন সুবিধা সৃষ্টি করা হয়েছে সেখানে সাংবাদিকদেরও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখান থেকে বিধি মোতাবেক এককালিন একটা টাকা দিয়ে এবং মাসিক দীর্ঘমেয়াদি মেয়াদি ভিত্তিতে সাংবাদিকরা কোন ফøাট চাইলে নিতে পারেন।
পাশাপাশি সাংবাদিকদের জমি বরাদ্দের বিষয়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে যে আবেদন করা হয়েছে তার জন্য বিধিমোতাবেক যথাযথভাবে জমি প্রদানের ব্যবস্থা নেবেন বলেও জানান।
এরসঙ্গে জেলায় জেলায় সাংবাদিকদেও জন্য আলাদা প্লটের ব্যবস্থা করে দেয়াও সরকারের চিন্তা ভাবনার মধ্যে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “একটি জেলাভিত্তিক আবাসন প্রকল্প তৈরী করে দেব। যেন প্রত্যেক জেলায় আপনারা নিতে পারেন সে ব্যবস্থাটাও আমরা করবো।
তাঁর নিজের সীডমানি দিয়ে সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট করে দেয়ার প্রসংগ টেনে সেখানে আরো ১০ কোটি টাকা অনুদান প্রদানের ঘোষণা দেন এবং গণমাধ্যমের মালিক এবং সাংবাদিকদেরও কিছু কিছু করে সেখানে অনুদান জমা করার অনুরোধ জানান তিনি।
’৯৬ সালে তাঁর সরকারের বেসরকারি খাতকে উন্মুক্ত করে দেওয়ার মাধ্যমে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার প্রসংগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশে এখন যত সংবাদপত্র রয়েছে উন্নত দেশেও এতটা নেই। এর বাইরেও দেশে বর্তমানে ৩৩টি বেসরকারি টেলিভিশন সম্প্রচারে আছে। আরও ১৫টা সম্প্রচারের অপেক্ষায় বলে জানান তিনি।
‘বাংলাদেশে পেশা হিসেবে সাংবাদিকতা উচ্চমানের এবং এ পেশা মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে আছে,’ উল্লেখ করে শেখ হাসিনা ওয়েজ বোর্ড সম্পর্কে বলেন, ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন মালিকদের দায়িত্ব। কিন্তু সেটা না করে তারা যদি এখন মামলা করে সেটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। নবম ওয়েজ বোর্ড করা হয়েছে এবং ১০ম ওয়েজ বোর্ডের প্রস্তুতি চলছে। নির্বাচন খুব সামনে এবং নির্বাচনে তফসিল ঘোষনার পর সরকারের রুটিন ওয়ার্ক ছাড়া তেমন কিছু করার থাকেনা উল্লেখ করে তিনি বলেন, “১০ম ওয়েজ বোর্ডের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে, এই ব্যবস্থাটা আমরা নেব। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদেরকেও এর আওতায় নিয়ে আসার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। তাছাড়া সাংবাদিকদের কল্যাণে ‘গণমাধ্যম কর্মী চাকরী শতাবলী আইন’ প্রণয়নের চিন্তা-ভাবনাও তাঁর সরকারের রয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা নিজেও সাংবাদিক ছিলেন। যার কারণে আপনাদের মাঝে এলে আমি দাবি করি, আমি আপনাদেরই পরিবারের একজন। সাংবাদিক কলাকুশলীদের যাতে কর্মসংস্থান হয় সেজন্য সব কিছু বেসরকারিভাবে উন্মুক্ত করে দিয়েছি। তথ্য অধিকার আইন, তথ্য কমিশন ও জাতীয় অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা ২০১৭, জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ করেছি।

তাঁর সরকার নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করেছে, যেখানে রেলসংযোগও দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্্েরসওয়ে, কর্ণফ’লী টানেল, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপনসহ আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরে এধারা অব্যাহত রাখতে তাঁদের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’য় ভোট দেয়র জন্য ও সকলের প্রতি অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী।

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

  • Visits Today: 4290
  • Total Visits: 752655
  • Total Visitors: 2
  • Total Countries: 1127

আজকের বাংলা তারিখ

  • আজ সোমবার, ২০শে মে, ২০২৪ ইং
  • ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ (গ্রীষ্মকাল)
  • ১১ই জ্বিলকদ, ১৪৪৫ হিজরী
  • এখন সময়, সকাল ১১:০২

Archives

MonTueWedThuFriSatSun
  12345
20212223242526
2728293031  
       
  12345
2728     
       
     12
3456789
10111213141516
17181920212223
31      
  12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930   
       

https://youtu.be/dhqhRb9y018